আমার নামের যথার্ততা ও মানুষের জীবনে নামের প্রভাব



মেহেদী এটি মূলত আরবি( ﻣَﻬْﺪِﻯّ ) শব্দের পরবর্তিত রূপ। আসল উচ্চারণ, ' মাহদী ।' অর্থ, হেদায়েত প্রাপ্ত, পথের সন্ধান প্রাপ্ত, সুপথ প্রাপ্ত। আর হাসান এটিও মূলত আরবি (ﺣَﺴَﻦْ ) শব্দ। অর্থ, সুন্দর, সুদর্শন,ভালো, চমৎকার, শুভ, মনোরম। মেহেদী হাসান ( ﻣَﻬْﺪِﻯّ ﺣَﺴَﻦْ ) একত্রে করলে অর্থ দাঁড়ায়," হেদায়েত প্রাপ্ত/ পথের সন্ধান প্রাপ্ত/ সুপথ প্রাপ্ত সুদর্শন ব্যক্তি।"

আলহামদুলিল্লাহ। নিজেকে নিয়ে আত্মসমালোচনা করে ও আমাকে দেওয়া মানুষের ফিডব্যাক অনুযায়ী, আমার বাবা-মা আমার উপযুক্ত নাম রেখেছেন বলে মনে হচ্ছে।

এবার আশা যাক ইসলামের সুন্দর নাম রাখার বিধানের যথার্ততা: -
মানুষের পরিচয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক মাধ্যম হচ্ছে তার নাম। এজন্য ইসলামে নাম রাখার গুরুত্ব অপরিসীম। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে উম্মতকে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন। ভালো নাম চিহ্নিত করার পাশাপাশি মন্দ ও অসুন্দর নাম রাখা থেকে বাঁচার জন্য সতর্ক করেছেন এবং অসুন্দর নাম পরিবর্তন করে ভালো নাম রাখার মাধ্যমে বাস্তব জীবনে এর আমলী নমুনা পেশ করেছেন।নাম শুধু পরিচয়েরই বাহন নয়; বরং ব্যক্তির চিন্তা-চেতনা ও রুচি-অভিরুচিরও আয়না স্বরূপ। সুন্দর নাম মন-মানসিকতার উপর প্রভাব ফেলে এবং মন্দ নামেরও কিছু না কিছু প্রভাব ব্যক্তির উপর থাকে।একটু কল্পনা করুন- এক ব্যক্তির নাম হচ্ছে কালু। উচ্চশিক্ষা লাভ করে সে বড় ডাক্তার বা প্রফেসর হয়ে গেলেন। এখন তাকে ডাকা হচ্ছে ডাক্তার কালু বা প্রফেসর কালু বলে। তাহলে ব্যাপারটা কেমন দেখাবে? তার নাম ও পদের মধ্যে কি কোনো সামঞ্জস্য থাকবেএধরনের নাম দ্বারা ব্যক্তিত্বের মানহানী হয়। পাশাপাশি ব্যক্তির ধর্ম ও জাতীয় পরিচয়ও থাকে অস্পষ্ট। তাই ঘরের ফুলবাগানে যখন কোনো শিশু কলি হয়ে আসবে তখন সতর্কতার সাথেই তার নাম নির্বাচন করা উচিত। যেন নামটা হয় ইসলামী, সুন্দর ও ভাবগম্ভীর।

ভালো নাম রাখা পিতা-মাতার সর্বপ্রথম দায়িত্ব। আমরা এভাবেও বলতে পারি যে, পিতা-মাতার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম হক হচ্ছে, তার জন্য সুন্দর নাম নির্বাচন করা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. ও  আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

সন্তানের সুন্দর নাম রাখা ও তার উত্তম তারবিয়াতের ব্যবস্থা করা বাবার উপর সন্তানের হক।
-মুসনাদে বাযযার (আলবাহরুয যাখখার), হাদীস ৮৫৪০

মানসিকতার উপর নামের প্রভাব:- মানসিকতা ও স্বভাবের উপরও নামের একটা প্রভাব থাকে।

ü  আবদুল হুমাইদ বিন শায়বা বলেন, আমি হযরত সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিবের কাছে বসা ছিলাম। তিনি তখন বললেন, আমার দাদা হাযান একবার নবীজীর দরবারে উপস্থিত হলেন। নবীজী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কী? দাদা বললেন, আমার নাম হাযান। (হাযান অর্থ শক্তভূমি) নবীজী বললেন- না, তুমি হচ্ছ সাহল (অর্থাৎ তোমার নাম হাযানের পরিবর্তে সাহল রাখো; সাহল অর্থ, নরম জমিন।) দাদা বললেন, আমার বাবা আমার যে নাম রেখেছেন আমি তা পরিবর্তন করব না। সাইদ ইবনুল মুসায়্যিব বলেন, এর ফল এই হল যে, এরপর থেকে আমাদের বংশের লোকদের মেযাজে রুঢ়তা ও কর্কশভাব রয়ে গেল। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬১৯৩

কারো নাম অসুন্দর হলে নাবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখতেন। হাদীস শরীফে এ ধরনের অনেক ঘটনা বর্ণিত আছে। উদাহরণ স্বরূপ নিম্নে কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হল-মুহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা বলেন, আমি আমার মেয়ের নাম রাখলাম- বাররা (নেককার, ভালো মানুষ)। তখন যয়নব বিনতে আবি সালামা বললেন-

ü  আমার নাম ছিল, বাররা।নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেরা নিজেদের পবিত্রতা ঘোষণা কোরো না। (কারণ, বাররা অর্থ, ভালো, নেককার, পূত-পবিত্র) আল্লাহই জানেন তোমাদের মধ্যে ভালো ও পূত-পবিত্র কারা। জিজ্ঞেস করা হল, তাহলে আমরা তার কী নাম রাখতে পারি? তখন নবীজী বললেন, তার নাম যয়নাব রাখ। (নবীজীর আদেশে তখন বাররা নাম পরিবর্তন করে তার নাম যয়নাব রাখা হল।) -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪২

কিছু নাম অপছন্দনীয় হওয়ার কারণ:-
অহংকার ও নিজের বড়ত্বের দিকে ইঙ্গিত থাকায় নবীজী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু কিছু নাম অপছন্দ করতেন।হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে অপছন্দনীয় হবে ঐ ব্যক্তির নাম, যে মালিকুল আমলাক (রাজাধিরাজ) নাম ধারণ করেছে। -সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৪০৩ মুসলিম শরীফের বর্ণনায় আছে, কিয়ামতের দিন ঐ ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার অনেক বেশি গোস্বার পাত্র হবে, যাকে মালিকুল আমলাক (বাদশাহদের বাদশাহ) নামে ডাকা হত। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত বাদশাহ আর কেউ নেই। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৪৩

ü  হযরত ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর রা.-এর এক মেয়ের নাম ছিল আছিয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে রাখলেন জামীলা। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২১৩৯কারণ, আছিয়া শব্দের একটি অর্থ, নাফরমান, অবাধ্যচারিনী। এ নামের মধ্যে আল্লাহ তাআলার অবাধ্যাচরণের ইঙ্গিত রয়েছে। তাই কোনো মুসলমানের জন্য এ ধরনের নাম রাখা উচিত নয়।

সুন্দর নামের গুরুত্ব:-
সুন্দর নাম রাখার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল, হাশরের ময়দানে- সেখানে পূর্বাপর সকল মানুষ একত্রিত হবে এবং ব্যক্তিকে তার নাম ও তার বাবার নামসহ ডাকা হবে। হযরত আবুদ দারদা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-


ü  কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে ডাকা হবে তোমাদের ও তোমাদের বাবার নাম নিয়ে (অর্থাৎ এভাবে ডাকা হবে- অমুকের ছেলে অমুক)। তাই তোমরা নিজেদের জন্য সুন্দর নাম রাখ। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৯৪৮

একজন অপরজনের নাম সম্পর্ক অবগত হওয়া ঈমানী ভালোবাসা এবং মুসলিম ভ্রাতৃত্বেরও দাবি। তাই এমন নাম রাখা উচিত নয়, যা বলতে মানুষ লজ্জাবোধ করে। ইয়াযীদ ইবনে নাআমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

ü  কেউ যখন অন্যের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে চায় তাহলে সে যেন তার নাম, তার বাবার নাম ও বংশের কথা জিজ্ঞেস করে। এর দ্বারা ভালোবাসার বন্ধন আরো গভীর হয়। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৩৯২

উপরের রেওয়ায়েতসমূহ দ্বারা এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, সন্তানের সুন্দর নাম রাখা পিতা-মাতার অবশ্যকর্তব্য। এটা পিতা-মাতার উপর সন্তানের সর্বপ্রথম হক। কখনো কোনো কারণে মন্দ ও অসুন্দর নাম রেখে ফেললে তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখা উচিত। এটাই নবীজী সাল্লাল্লাহু  আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত।আল্লাহ পাক আমাদের ভবিষৎ পিতা-মাতাদের সুন্দর নাম রাখার িতৈফিক দান করুক , আমিন। 

কিছু  ইসলামিক সুন্দর নাম: 
মেয়ে:
https://eshikhon.com/%e0%a6%85%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%b8%e0%a6%b9-%e0%a6%ae%e0%a7%87%e0%a7%9f%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%87%e0%a6%b8%e0%a6%b2%e0%a6%be-2/

ছেলে:
https://eshikhon.com/%e0%a6%85%e0%a6%b0%e0%a7%8d%e0%a6%a5%e0%a6%b8%e0%a6%b9-%e0%a6%9b%e0%a7%87%e0%a6%b2%e0%a7%87-%e0%a6%b6%e0%a6%bf%e0%a6%b6%e0%a7%81%e0%a6%a6%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%aa%e0%a7%82%e0%a6%b0%e0%a7%8d/






Comments

Popular posts from this blog

Business Benefits of Using Flutter Technology

অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং বেসিক কনসেপ্ট

ডার্ট প্রোগ্রামিংয়ের খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফিচার Async & Await কি? কেন?

ডার্ট প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে অপ্রত্যাশিত ইভেন্ট বা ঘটনা কিভাবে হ্যান্ডেল করবেন?